নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

নির্মলচন্দ্র মাইতি

निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

অরিন্দম ভৌমিক।


(৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০)


জ্যোতির্ময়ং সদা সৌম্যাং নমামি নন্দ-নন্দনম।

তুমি পেয়েছো গো জাতীয় সম্মান

এত আমাদের সবার গৌরব

ছড়িয়ে পড়ুক চারিধারে

তোমার যশের সৌরভ।


তুমি নও শুধু আজ এক শিক্ষক

তোমার পরিচয় সমাজসেবক

সমাজের কল্যাণ তোমারই যে ধ্যান-জ্ঞান

চাওনি তো বিত্ত বিভব।


তোমার মাঝে প্রাণ উদ্দীপনা।

কতজনে দিয়েছো গো প্রেরণা

কত প্রতিষ্ঠান কত অনুষ্ঠান

করেছো গো শুভ সূচনা

তুমি নিরলস নির্লোভ নির্ভীক

সংযম সংগ্রামী সৈনিক

তোমারি আহ্বানে দেয় সাড়া গুণিজনে

প্রাঙ্গনে লাগে উৎসব।


তখন ২০১০ সাল, আমি বেশ কয়েক মাসের জন্য ব্যাঙ্গালোর থেকে এসে পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামে গ্রামে তথ্য সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রথম প্রথম তমলুকে গেলেই আমার ঠিকানা ছিল শ্রদ্ধেয় প্রণব বাহুবলিন্দ্র মহাশয়ের বাড়ি। সেখানেই প্রথম দেখা হয়েছিল শ্রী নির্মলচন্দ্র মাইতির সঙ্গে। তখন নির্মল বাবুর সম্পর্কে কিছুই জানিনা। অথচ তিঁনি আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বললেন, যেন আমি তাঁর বহুদিনের পরিচিত কোন আত্মীয়। অহংকারের লেশমাত্র নেই, সব ব্যাপারেই প্রচন্ড উৎসাহ।

কিছুদিন পরেই (২০১১ সাল) আমরা (TMKM Heritage Comittee) শুরু করি "পূর্ব মেদিনীপুর হেরিটেজ তথ্যপঞ্জী" নামে একটি বইয়ের কাজ। সেই বইয়ের প্রধান সম্পাদক নির্বাচিত হন নির্মল বাবু। বইটির ব্যাপারে প্রায়ই মিটিং ডাকা হত, আমরা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গিয়ে মিলিত হতাম প্রণব বাবুর বাড়িতে। দেখা হত নির্মল বাবুর সঙ্গে, মিটিংয়ের ফাঁকে চলত গল্প ও খাওয়া-দাওয়া।

সেই সময় জেলাশাসক ছিলেন অন্তরা আচার্য মহোদয়া। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হেরিটেজ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ ছিল তাঁর। তাঁরই নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি জেলা হেরিটেজ কমিটি। মিটিং হত ডি.এম. অফিসের কনফারেন্স হলে। সেই মিটিংয়েও দেখা হত নির্মলবাবুর সঙ্গে। মেদিনীপুর ফেরার সময় মাঝে মাঝেই নির্মলবাবুর সঙ্গে ফিরতাম। প্রত্যেকবারই আমাকে নিয়ে কারুর না কারুর বাড়িতে ঢুকে পড়তেন, কিছুক্ষন গল্প করে আবার রওনা দিতেন। আলাপ হত বহু গুণী মানুষের সঙ্গে।

এরপর আবার ব্যাঙ্গালোরে চলে যাই। এক বছর পরে ফিরতেই নির্মল বাবুর ফোন। তাঁরই গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেন, শুনলাম পরিচিত সবাই আসছেন ওই অনুষ্ঠানে। অনেকদিন পরে সবার সঙ্গে দেখা হবে, এই খুশিতেই রওনা দিলাম নির্মল বাবুর গ্রামে। পৌঁছে সবার সঙ্গে দেখা হতে খুব ভাল লাগল। অনুষ্ঠান চলা কালীন আমি একটু এদিন-ওদিক ঘুরছিলাম। হঠাৎ লক্ষ করলাম নির্মল বাবু স্টেজ নাই, নিচেও কোথাও দেখতে পেলাম না। ভাবলাম হয়ত কোথাও দরকারে গিয়েছেন।

ঘুরতে ঘুরতে স্টেজের পেছেন দিকে রাস্তার কাছে পৌঁছতেই মনে হল, পেছেন থেকে কেউ আমাকে চাপা স্বরে ডাকছেন। তাকিয়ে দেখি নির্মলবাবু একজনের কাছ থেকে আইসক্রিম জাতীয় কিছু একটা কিনে খাচ্ছেন (সাইকেলের পেছনে ছোট্ট বাক্স করে বিক্রি করছেন)। কাছে যেতেই, একমুখ হাঁসি নিয়ে বললেন - "খাবে নাকি জীবন-ঠান্ডা, খেয়ে দেখ ভাল লাগবে"। সেই আমার প্রথম 'জীবন-ঠান্ডা' খাওয়া, খেয়ে সত্যিই ভাল লেগেছিল। তারপর থেকে গ্রামে জীবন-ঠান্ডা দেখলেই খেতাম।

নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সবথেকে বেশি পুরাকীর্তি রয়েছে পাঁশকুড়া অঞ্চলে। আমার বই "মেদিনীকথা" -র জন্য তথ্য ও ছবি সংগ্রহের ব্যাপারে পাঁশকুড়া নিয়েই সবথেকে বেশি চিন্তা ছিল আমার। সেই চিন্তা দূর করেছিলেন নির্মল বাবু, প্রায় ৫০ টি গ্রাম তিনি আমার বাইকের পেছনে বসে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন আমার সঙ্গে। এমন কোন গ্রাম পাইনি যেখানে নির্মল বাবুকে কেউ চেনেনা। অল্প বয়স্ক থেকে বৃদ্ধ সবাই চেনেন এবং শ্রদ্ধা করেন নির্মল বাবুকে। খাওয়ার কোন চিন্তা ছিলো না, যে গ্রামে দুপুরের খাওয়ারের সময় হত সেই গ্রামেই কোন পরিচিতের বাড়িতে খেয়ে নিতাম। রাত্রে থাকতাম তাঁর গ্রামের বাড়িতে (একরাত্রে স্টেশনের কাছে নির্মল বাবুর ছেলের বাড়িতেও ছিলাম)।

মনে পড়ে একদিন ট্রেনে করে কলকাতা থেকে একসঙ্গে ফিরে, পাঁশকুড়া স্টেশনের বাইরে তাঁর বন্ধুর সারের দোকানে বসলেন। তখন রাত্রি ৯.৩০, গল্প করতে করতে হঠাৎ বললেন - "খিদে পেয়েছে রাতের খাওয়ারটা এখানেই খেয়ে নিলে হয়, কি বল অরিন্দম ?"। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জন্য প্লেটে তড়কা-রুটি চলে এল। সেখানে বসেই রাত্রের খাওয়ার খেয়ে রওনা দিলাম তাঁর বাড়ির উদ্দেশে।

এরপর বহুবার গেছি নির্মলবাবুর গ্রামে। কখনো হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো আই.আই.টি আবার কখনো ইন্ডিয়ান নেভাল একাডেমির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে (মূলত মাংলই -এর মন্দির দেখাতে)। খুব ব্যাস্ত থাকা সত্যেও প্রত্যেকবারই সঙ্গ দিয়েছেন নির্মল বাবু। ২০১৪ সালে আমার ছেলের অন্নপ্রাশন উপলক্ষ্যে প্রথমবার নির্মলবাবু এলেন মেদিনীপুরে আমার বাড়িতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সবার সঙ্গে কাটিয়ে ছেলেকে আশীর্বাদ করে সন্ধের দিকে বিদায় নিলেন। অসীম ধৈর্য্য, আত্মবিশ্বাস, সৎচরিত্র, ধর্মপ্রাণ, কর্তব্যপরায়ণ, পরিশ্রমী, চিরযৌবনের প্রতীক, জেদী মানসিকতা অথচ সাধারণ জীবনযাপন নির্মল মাইতিকে করেছে মহান। তাঁর একটি কথা বার বার মনে পড়ে - "আদর্শ কখনো মরে না। আমরা সবাই চলে যাবো কিন্তু আদর্শ চির অক্ষয়"।

সংক্ষিপ্ত জীবন-পঞ্জী


১৯৩৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার জশোড়া গ্রামে মামারবাড়িতে নির্মলচন্দ্র মাইতির জন্ম হয়। পিতা রাসবিহারী মাইতি এবং মাতা প্রভাবতী দেবী। নির্মলবাবু মাত্র তিন মাস বয়সে পিতাকে হারান। নিদারুণ দারিদ্র ও কষ্টের মধ্যে প্রভাবতী দেবী ছেলেকে মানুষ করে তোলেন। শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাইশোরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৫১ সালে পাঁশকুড়া ব্রাডলিবার্ট হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এখানে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক পরিতোষ দাঁ তাঁকে সাহায্য না করলে তাঁর পড়াশুনাই হোত না। নির্মলবাবু তাঁদের সেই অবদান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। তিনি ১৯৫৩ সালে মেদিনীপুর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। কিন্তু এরপরে আর্থিক অনটন দুঃসহনীয় হয়ে ওঠে। কোন উপায় না পেয়ে, তিনি বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ীর সাহায্য নিয়ে ১৯৫৬ সালে স্নাতক হন।

১৯৫৬ সালেই তিনি ভোগপুর কেনারাম স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। এই স্কুলে প্রায় এক বছর কাজ করার পরে পাঁশকুড়া ব্রাডলিবার্ট হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে ডেভিড হেয়ার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণে চলে যান। তারপরে ১৯৫৮ সালের ২ জুন তিনি শ্যামসুন্দরপুর পাটনা জুনিয়র হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন।

তখন এই স্কুলটির ছিল মাত্র দুটি ক্লাস (৫ম ও ৬ষ্ঠ)। নির্মলবাবু অক্লান্ত প্রয়াসে বিদ্যালয়টিকে ১৯৬১ সালে দশম শ্রেণীর বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। পরের বছরই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে শ্যাসসুন্দরপুর পাটনা হাইস্কুলে তিনি একাদশ শ্রেণী চালু করেন। এই স্কুলটিকে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে উন্নীত করাই নির্মলবাবুর একমাত্র অবদান নয়। তিনি বিদ্যালয়টির পরিকাঠামোগত দিকেরও বিরাট পরিবর্তন ঘটান। সেই সঙ্গে পঠন-পাঠনেরও উন্নতি সাধন করেন। যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগ করেন। ফলে অচিরেই বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্য বিদ্যালয়টিকে সারা মেদিনীপুর জেলার মধ্যে বিশিষ্ট স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট কাঠের সঙ্গে তাঁর হৃদয়ের ভালবাসা জড়িয়ে আছে।

নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

নির্মলবাবু ছিলেন একজন শিক্ষক নেতা। বিভিন্ন শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে তিনি গভীর ভাবে যুক্ত। ১৯৬১ সালেই তিনি পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মেদিনীপুর জেলা শাখার সভাপতি হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ওই সমিতির রাজ্য কমিটির কার্যকরী সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি পঃ বঃ মধ্যশিক্ষা পর্যদেরও একজন নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। কংগ্রেস আমলে বিদ্যালয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে অবৈজ্ঞানিক কোটা প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করে তিনি মেদিনীপুর জেলায় ৩০টির পরিবর্তে ২০০টি স্কুলের অনুমোদন আদায় করেন। তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী মৃত্যুঞ্জয় বন্দোপাধ্যায় তাঁর নাম দিয়েছিলেন “মাইটি নির্মল (Mighty Nirmal)"। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত কর্মশিক্ষা ও শারীর শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত স্কুলে স্কুলে প্রচার করেন।

নির্মলবাবু ছিলেন একজন সমাজকর্মী। তিনি জাতীয় কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য। ১৯৬৪ সালে আঞ্চলিক পরিষদের সভাপতি এবং মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য হন। ১৯৭৪ সালে পাঁশকুড়া ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি হন। তিনি তাঁর এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও তপশীল শ্রেণীর মানুষের উন্নতির জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালে পঃ বঃ শিক্ষক প্রতিনিধিরূপে বাংলাদেশের ঢাকায় শিক্ষক ও শিক্ষা সম্মেলনে যোগ দেন।

দূরদর্শন দ্বারা নির্মিত ও সম্প্রচারিত নির্মলচন্দ্র মাইতির সাক্ষাৎকারের ভিডিও।

নির্মলবাবু শুধু শ্যামসুন্দরপুর পাটনা হাইস্কুলেই উন্নতি করেননি। ১৯৭১ সালে তিনি বিদ্যালয়ের পরিপূরক হিসাবে নারী শিক্ষার প্রসারে স্থাপন করেন কৃষ্ণচরণ বালিকা বিদ্যালয়। শ্যামসুন্দরপুর পাটনায় তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ মিলন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। একই ক্যাম্পাসে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ বিদ্যালয় (ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল)। ২০১৩ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধিনাথ মহাবিদ্যালয় সরকারি স্বীকৃতি পায়। তাঁর উদ্যোগে গ্রামবাসীর সুবিদার্থে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শাখা। এটিই এই অঞ্চলের প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। শুধু ব্যাঙ্কই নয় শহর থেকে এতো দূরে গ্রামের মধ্যে এ.টি.এম. খোলে তাঁরই চেষ্টায়। এলাকার প্রথম পোস্ট অফিসটিও প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁর হাত ধরে।

জমিদার হরিসাধন পাহাড়ি'র স্মৃতিতে খুলেছিলেন অনাথাশ্রম (পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়ে যায়)। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব মন্ত্রী শ্যামাদাস ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। শ্যামাদাস বাবুকে ধরে রাধাবল্লভপুরের পরে ত্রিবেণী সঙ্গমে সুইস-গেট তৈরী করান যাতে সংলগ্ন সমস্ত অঞ্চলের চাষীদের চাষের সুবিধা হয়। তিঁনি ছিলেন পাঁশকুড়া সাহিত্য সাংস্কৃতিক মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে উপকার করে গেছেন দরিদ্র মানুষের।

নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

নির্মলচন্দ্র মাইতি | निर्मल चंद्र मैती | Nirmal Chandra Maity

শেষ সময়ে সিদ্ধিনাথ মহাবিদ্যালয়কে মডেল কলেজ রূপে দেখতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্রামে একটি কৃষি মহাবিদ্যালয় ও একটি প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর।

নির্মলবাবু ছিলেন খুবই মাতৃভক্ত। তিনি মনে করেন মায়ের প্রভাবেই তাঁর জীবন গঠিত। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবনতঃ তিনি জুতো পরা ছেড়েছেন। সেই থেকে তিনি খালি পায়েই থাকেন, সর্বত্র চলাফেরা করেন। সেজন্য তাঁকে অনেকে “খালিপদ হেডমাস্টার” বলেও ডাকতেন। সাংসারিক জীবনেও নির্মলবাবু সফল। তার চারজন সন্তানই কৃতী ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত। একমাত্র কন্যা বিবাহিতা । তিনি নিজে খুবই সরল ও সাদাসিদে জীবন যাপন করেছেন। প্রচণ্ড পরিশ্রমী এবং আদর্শনিষ্ঠ। সারা জেলায় এবং রাজ্যেও তিনি এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব।

পাঁশকুড়া থানার অন্তর্গত শ্যামসুন্দরপুর পাটনা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্মলচন্দ্র মাইতি শুধু একজন আদর্শ-নিষ্ঠ, ছাত্রদরদী, সফল শিক্ষকই নন, তিনি একজন সু-প্রশাসক এবং সংগঠকও। শিক্ষার প্রসারে এবং শিক্ষা আন্দোলনেও তার ভূমি ভূমিকা উজ্জ্বল। তাঁর সেই কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ কেন্দ্রীয় সরকারের মানব সম্পদ বিকাশ মন্ত্রক ১৯৯৪ সালে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার নেওয়ার সময়ও খালি পায়ে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে।

বিভিন্ন পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন দুটি উল্লেখযোগ্য বই -


পাঁশকুড়া থানার ইতিহাস (২০০৮)।

পূর্ব মেদিনীপুর হেরিটেজ তথ্যপঞ্জী (২০১২)।


তাঁর সম্পর্কে তিনটি জীবনী মূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে -


পুষ্পাঞ্জলি, দীপনারায়ণ মহাপাত্র (১৯৯৪)

অন্যন্য জাতীয় শিক্ষক, ডঃ গোবিন্দপ্রসাদ কর (২০১৬)

নির্মল আলোকে, ডঃ গোবিন্দপ্রসাদ কর (২০১৮)


২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধে ৬.৫০ টার সময় এগরা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শেষ সময়ে তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন ছোট ছেলে হিমাংশু মাইতি (ঐ হাসপাতালের ডাক্তার), সেজ ছেলে আমলাংশু মাইতি (ইঞ্জিনিয়ার), মেজ ছেলে অরুনাংশু মাইতি (এ.ডি.ও), বড় ছেলে অমিতাভ মাইতি (অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি, গৃহ মন্ত্রক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার)।


অরিন্দম ভৌমিক।

midnapore.in

(Published on 04.10.2020)

গানটির কথা, সুর ও শিল্পী শ্রী নারায়ণচন্দ্র দাস (শিক্ষক, শ্যামসুন্দরপুর পাটনা উচ্চবিদ্যালয়)